আত্মা- Soul (নফস ও রুহ) মানুষের
রহস্যময় আত্মা এবং আরও রহস্যময় ও অদৃশ্য মহান স্রষ্টা ‘আল্লাহ’ সম্পর্কে
নানা তথ্য গোটা কুর’আন শরীফে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। এসব তথ্য একত্রিত করা এবং
মহান রবকে আরও ভালভাবে জানার জন্য পদ্ধতিগতভাবে চিন্তা করা হয়েছে
ধারাবাহিক এ প্রবন্ধে। মানব-আত্মার
গঠন, প্রকৃতি, উদ্দেশ্য বিশ্লেষণ করতে গিয়ে দেখা যায়- তার সঙ্গে কুর’আনে
বর্ণিত ‘সামাওয়াত ওয়াল-আরদ’ এর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। ‘সামাওয়াত ওয়াল-আরদ’
এর বাংলা- মহাকাশ ও যমিন। তাই
এখানে সংক্ষেপে মহাবিশ্ব নিয়ে আলোচনা করা হলো এবং প্রাসঙ্গিকভাবে মানুষ,
জ্বিন ও ফেরেশতারা চলে এসেছে। কারণ, তারাও এই সুবিশাল, রহস্যময় ও ভয়ঙ্কর
মহাবিশ্বের অবিচ্ছেদ্য অংশ। বিশেষ করে জিন জাতি। বলে রাখা ভালো, কুর’আনে
বর্ণিত ‘জিন’ মানুষের ধারণা অনুযায়ী কোনো ভূত-প্রেত টাইপের বস্তু নয়। বরং
মহান আল্লাহর সৃষ্ট আরেক ধরণের প্রাণী যারা মূলত এই স্তরে স্তরে সজ্জিত
সপ্ত আসমানের ‘সামাওয়াত’ বা মহাবিশ্বের প্রধান অধিবাসী। Are you a Stronger creation or is the Universe? Allah constructed it. [Al Quran 79:27] তোমারাই কি শক্তিশালী সৃষ্টি নাকি মহাবিশ্ব- যা তিনি সৃষ্টি করেছেন। [আল কুর’আন ৭৯:২৭] মহা
বিস্ময়কর মহাবিশ্বে মানুষ কীভাবে আল্লাহর প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছে ও
করবে- সে সম্পর্কে বোঝার চেষ্টা করা হয়েছে ধারাবাহিক প্রবন্ধে।
আলোচনায়
বিজ্ঞানের সাধারণ ও প্রতিষ্ঠিত ধারণা দিয়ে বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক তথ্যের
ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এর প্রধান উদ্দেশ্য বিষয়টি আরও সুস্পষ্টভাবে অনুধাবন
করা। বাস্তবতা হলো- আমাদের বিশ্বাস মজবুত করার জন্য মহাগ্রন্থ আল-কুর’আনই
যথেষ্ট।
অধ্যায় ১: আত্মা বা Soul
প্রথমে আত্মা সম্পর্কে প্রাথমিক তথ্যগুলো জানার চেষ্টা করব। আশা করা যায়- আত্মা সম্পর্কে জানার মাধ্যমে মহান প্রভুর অন্যান্য সৃষ্টি সম্পর্কে বোঝা যাবে- যা অদৃশ্য।
আমাদের চারপাশে বেশ কিছু ‘আত্মার’ অস্তিত্ব টের পাওয়া যায়; কিন্তু সেগুলোকে ‘আত্মা’ বা Soul হিসেবে আমরা সচরাচর চিনতে পারি না। কারণ তার ভিন্ন নামকরণ করা হয়েছে।
চলুন তাহলে চেনার চেষ্টা করা যাক। প্রথমেই দেখি, আত্মা বা Soul কী?
১. আত্মা ও ফোর্স ফিল্ড (শক্তি ক্ষেত্র) Soul and Force Field
আমরা বুঝতে পারি যে, মানুষের আত্মা তার চরিত্র, স্বভাব ও প্রকৃতি নির্ধারণ করে থাকে এবং ‘মূল জীবিত সত্তা’ হিসাবে মানবদেহে টিকে থাকে। আত্মার দেহত্যাগেই মানবদেহের মৃত্যু নিশ্চিত হয়। কিন্তু, মানুষের আত্মাকে সুষ্পষ্টভাবে ধরা, দেখা ও বোঝা যায় না!
তাই ‘আত্মা’ বুঝতে হলে, আত্মার মতো অন্যান্য শক্তি সম্পর্কে জানতে হবে।
ধর্মীয় কাজের সঙ্গে সম্পর্কহীন কিছু হাদিসে দেখা যায়- প্রতিটি বস্তুর (জড় পদার্থের) আত্মা আছে। এ বিষয়টি সত্য বলে আমরা জানতে পেরেছি। বৈজ্ঞানিক তথ্য উপাত্ত প্রমাণ করেছে যে, বিভিন্ন ধরণের ফোর্স ফিল্ড (force field) মহাবিশ্বের প্রাকৃতিক ব্যবস্থা টিকিয়ে রেখেছে। বিজ্ঞানীরা হতবাক হয়ে যান, যখন তাঁরা দেখেন যে- এই সুবিশাল মহাবিশ্ব এতটাই নিখুঁত ও সু-সামঞ্জস্যপূর্ণ (fine-tuned universe) কঠোর নিয়ন্ত্রণ ছাড়া তা সম্ভব না! কে নিয়ন্ত্রণ করছে এসব। এর উত্তর আমরা জানি।
যিনি সৃষ্টি করেছেন স্তরে স্তরে সাত আকাশ। দয়াময়- রহমানের সৃষ্টিতে কোনো খুঁত তুমি দেখতে পাবে না! আবার তাকিয়ে দেখো, কোনো খুঁত পাও কি? তারপর বার বার খুঁজে দেখো, দৃষ্টি ব্যর্থ ও ক্লান্ত হয়ে ফিরে আসবে তোমার দিকে। [ ৬৭:৩,৪]
He created seven skies in layers. You do not see any discordance in the creation of the All-beneficent. Look again! Do you see any flaw? Look again, once more. Your look will return to you humbled and weary. [67:3,4]
বিজ্ঞানীরা এখন পর্যন্ত চারটি ফোর্স ফিল্ড খুঁজে পেয়েছেন। ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক
ফোর্স ফিল্ড (আলো), স্ট্রং নিউক্লিয়ার ফোর্স ফিল্ড, উইক নিউক্লিয়ার
ফোর্স ফিল্ড ও গ্র্যাভিটি। এই ফোর্স ফিল্ড-গুলো মূলত আত্মা বা ‘প্রভুর
আদেশ’ হিসেবে কাজ করে। যেমন- ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ফোর্স ফিল্ড বা
‘বিদ্যুৎচৌম্বক ক্ষেত্র’ বা চৌম্বক ক্ষেত্র (magnetic field)।
একটি ‘ফোর্স ফিল্ড’ এবং একটি ‘আত্মা’ একই জিনিস হতে পারে; অদৃশ্য চৌম্বক ক্ষেত্র জড় পদার্থটিকে বিশেষ চরিত্র-বৈশিষ্ট্য দেয়। যা ধরা-ছোঁয়া বা দেখা যায় না; আবার তা জীবিত প্রাণীর মতো আচরণ করে! এই ধারণাটি যাচাই করার জন্য আমরা চৌম্বক ক্ষেত্র নিয়ে কিছু কথা বলবো।
ছবি ১.১: চৌম্বক ক্ষেত্র
প্রকৃতপক্ষে, এই
‘শক্তি ক্ষেত্র’ বা ‘ফোর্স ফিল্ড’- ‘মহান আল্লাহর আদেশ’ হিসাবে বিশাল গ্রহ
(জড় পদার্থ) পৃথিবীতে সুষ্ঠুভাবে কাজ করছে। পৃথিবীর জীবন্ত প্রাণীজগৎ এই
দুর্দান্ত ‘চৌম্বক ক্ষেত্র’ ছাড়া কোনোভাবেই এক মুহূর্ত টিকতে পারে না।
মাথার ওপর চৌম্বক ক্ষেত্রের এই ছাদ না থাকলে মুহূর্তেই ধ্বংস হয়ে যেত
সবকিছু।
যিনি পৃথিবীকে তোমাদের জন্য বানিয়েছেন বিশ্রামের স্থান আর আকাশকে বানিয়েছেন ছাদ…
He who made the earth a place of repose for you, and the sky a canopy.. [০২:২২]
দৃশ্যপট ২
মূলত চৌম্বকত্ব- – ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক শক্তি (electromagnetic force) দিয়ে সৃষ্ট। এটি প্রকৃতির অন্যতম মৌলিক শক্তি। একটি চলমান বৈদ্যুতিক চার্জ এর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হলে লম্বভাবে একটি চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি হয়। মনে হয় যেন, চৌম্বক ক্ষেত্র ইলেকট্রনগুলোকে ধরে রাখছে ও যথাযথভাবে চারদিকে চৌম্বক ক্ষেত্র ধরে রাখার নির্দেশ দিচ্ছে।