আত্মা- Soul (নফস ও রুহ) কি ?? ( 36)

আত্মা- Soul (নফস ও রুহ)

মানুষের রহস্যময় আত্মা এবং আরও রহস্যময় ও অদৃশ্য মহান স্রষ্টা ‘আল্লাহ’ সম্পর্কে নানা তথ্য গোটা কুর’আন শরীফে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। এসব তথ্য একত্রিত করা এবং মহান রবকে আরও ভালভাবে জানার জন্য পদ্ধতিগতভাবে চিন্তা করা হয়েছে ধারাবাহিক এ প্রবন্ধে। মানব-আত্মার গঠন, প্রকৃতি, উদ্দেশ্য বিশ্লেষণ করতে গিয়ে দেখা যায়- তার সঙ্গে কুর’আনে বর্ণিত ‘সামাওয়াত ওয়াল-আরদ’ এর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে।  ‘সামাওয়াত ওয়াল-আরদ’ এর বাংলা- মহাকাশ ও যমিন। তাই এখানে সংক্ষেপে মহাবিশ্ব নিয়ে আলোচনা করা হলো এবং প্রাসঙ্গিকভাবে মানুষ, জ্বিন ও ফেরেশতারা চলে এসেছে। কারণ, তারাও এই সুবিশাল, রহস্যময় ও ভয়ঙ্কর মহাবিশ্বের অবিচ্ছেদ্য অংশ। বিশেষ করে জিন জাতি। বলে রাখা ভালো, কুর’আনে বর্ণিত ‘জিন’ মানুষের ধারণা অনুযায়ী কোনো ভূত-প্রেত টাইপের বস্তু নয়। বরং মহান আল্লাহর সৃষ্ট আরেক ধরণের প্রাণী যারা মূলত এই স্তরে স্তরে সজ্জিত সপ্ত আসমানের ‘সামাওয়াত’ বা মহাবিশ্বের প্রধান অধিবাসী। 

এখানে মানুষের রক্ষণাবেক্ষণে ফেরেশতাগণের ভূমিকা আলোচনা করা হয়েছে। কুর’আন থেকে ধারণা করা যায় যে, ফেরেশতাদের সাম্রাজ্য একটি বিশাল সাইবারনেটিক সিস্টেমের মতো স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা। প্রাসঙ্গিক আয়াত দিয়ে তা আলোচনা করা হবে।

এ প্রবন্ধে নফস্ (আত্মা), রুহ (আত্মা) ও কলব (মন) সংজ্ঞায়িত করার চেষ্টা করা হয়েছে। কীভাবে এ ব্যবস্থাগুলো কাজ করে- তা বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে। মানুষের নফসের সঙ্গে রুহের পার্থক্য, নফসের বিকশিত হওয়া এবং তার প্রতি গুরুত্ব দেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। বিশ্বাস করি- এ বিষয়গুলো জানা খুব জরুরি। যা জগৎ-সংসার, ধর্ম-কর্ম, সৃষ্টি-স্রষ্টা নিয়ে মানুষের চিন্তা ও ধ্যান-ধারণাকে উচ্চতর পর্যায়ে উন্নীত করবে।

পরিশেষে, সৃষ্টিজগতে ‘আল্লাহর প্রতিনিধি’ হিসেবে মানুষের সম্মান, মর্যাদা ও ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করা হবে। মহান প্রভু কুর’আনে বলেছেন-

Are you a Stronger creation or is the Universe? Allah constructed it.      [Al Quran 79:27]

তোমারাই কি শক্তিশালী সৃষ্টি নাকি মহাবিশ্ব- যা তিনি সৃষ্টি করেছেন। [আল কুর’আন ৭৯:২৭]

মহা বিস্ময়কর মহাবিশ্বে মানুষ কীভাবে আল্লাহর প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছে ও করবে- সে সম্পর্কে বোঝার চেষ্টা করা হয়েছে ধারাবাহিক প্রবন্ধে। 
আলোচনায় বিজ্ঞানের সাধারণ ও প্রতিষ্ঠিত ধারণা দিয়ে বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক তথ্যের ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এর প্রধান উদ্দেশ্য বিষয়টি আরও সুস্পষ্টভাবে অনুধাবন করা। বাস্তবতা হলো- আমাদের বিশ্বাস মজবুত করার জন্য মহাগ্রন্থ আল-কুর’আনই যথেষ্ট।

আত্মা- Soul (নফস ও রুহ) কি ??

অধ্যায় ১: আত্মা বা Soul


প্রথমে আত্মা সম্পর্কে প্রাথমিক তথ্যগুলো জানার চেষ্টা করব। আশা করা যায়- আত্মা সম্পর্কে জানার মাধ্যমে মহান প্রভুর অন্যান্য সৃষ্টি সম্পর্কে বোঝা যাবে- যা অদৃশ্য।

আমাদের চারপাশে বেশ কিছু আত্মার’ অস্তিত্ব টের পাওয়া যায়; কিন্তু সেগুলোকে আত্মা’ বা Soul হিসেবে আমরা সচরাচর চিনতে পারি না। কারণ তার ভিন্ন নামকরণ করা হয়েছে।

চলুন তাহলে চেনার চেষ্টা করা যাক। প্রথমেই দেখি, আত্মা বা Soul কী?

১. আত্মা ও ফোর্স ফিল্ড (শক্তি ক্ষেত্র) Soul and Force Field

আমরা বুঝতে পারি যে, মানুষের আত্মা তার চরিত্র, স্বভাব ও প্রকৃতি নির্ধারণ করে থাকে এবং ‘মূল জীবিত সত্তা’ হিসাবে মানবদেহে টিকে থাকে। আত্মার দেহত্যাগেই মানবদেহের মৃত্যু নিশ্চিত হয়। কিন্তু, মানুষের আত্মাকে সুষ্পষ্টভাবে ধরা, দেখা ও বোঝা যায় না! 

তাই ‘আত্মা’ বুঝতে হলে, আত্মার মতো অন্যান্য শক্তি সম্পর্কে জানতে হবে।

ধর্মীয় কাজের সঙ্গে সম্পর্কহীন কিছু হাদিসে দেখা যায়- প্রতিটি বস্তুর (জড় পদার্থের) আত্মা আছে। এ বিষয়টি সত্য বলে আমরা জানতে পেরেছি। বৈজ্ঞানিক তথ্য উপাত্ত প্রমাণ করেছে যে, বিভিন্ন ধরণের ফোর্স ফিল্ড (force field) মহাবিশ্বের প্রাকৃতিক ব্যবস্থা টিকিয়ে রেখেছে। বিজ্ঞানীরা হতবাক হয়ে যান, যখন তাঁরা দেখেন যে- এই সুবিশাল মহাবিশ্ব এতটাই নিখুঁত ও সু-সামঞ্জস্যপূর্ণ (fine-tuned universe) কঠোর নিয়ন্ত্রণ ছাড়া তা সম্ভব না! কে নিয়ন্ত্রণ করছে এসব। এর উত্তর আমরা জানি।

যিনি সৃষ্টি করেছেন স্তরে স্তরে সাত আকাশ। দয়াময়- রহমানের সৃষ্টিতে কোনো খুঁত তুমি দেখতে পাবে না! আবার তাকিয়ে দেখোকোনো খুঁত পাও কিতারপর বার বার খুঁজে দেখো, দৃষ্টি ব্যর্থ ও ক্লান্ত হয়ে ফিরে আসবে তোমার দিকে। [ ৬৭:৩,৪]

He created seven skies in layers. You do not see any discordance in the creation of the All-beneficent. Look again! Do you see any flaw? Look again, once more. Your look will return to you humbled and weary. [67:3,4]

বিজ্ঞানীরা এখন পর্যন্ত চারটি ফোর্স ফিল্ড খুঁজে পেয়েছেন।  ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ফোর্স ফিল্ড (আলো), স্ট্রং নিউক্লিয়ার ফোর্স ফিল্ড, উইক নিউক্লিয়ার ফোর্স ফিল্ড ও গ্র্যাভিটি। এই ফোর্স ফিল্ড-গুলো মূলত আত্মা বা ‘প্রভুর আদেশ’ হিসেবে কাজ করে। যেমন- ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ফোর্স ফিল্ড বা ‘বিদ্যুৎচৌম্বক ক্ষেত্র’ বা চৌম্বক ক্ষেত্র (magnetic field)। 

একটি ‘ফোর্স ফিল্ড’ এবং একটি ‘আত্মা’ একই জিনিস হতে পারে; অদৃশ্য চৌম্বক ক্ষেত্র জড় পদার্থটিকে বিশেষ চরিত্র-বৈশিষ্ট্য দেয়। যা ধরা-ছোঁয়া বা দেখা যায় না; আবার তা জীবিত প্রাণীর মতো আচরণ করে! এই ধারণাটি যাচাই করার জন্য আমরা চৌম্বক ক্ষেত্র নিয়ে কিছু কথা বলবো।

                                                                                                                ছবি ১.১: চৌম্বক ক্ষেত্র

১ (ক). কুরআনে আত্মা

কুরআনে, আত্মা (রুহ)-এর সংজ্ঞায় বলা হয়েছে- রুহ হলো আল্লাহর আদেশ।

They ask thee concerning the ruhh (soul). Say: “The ruhh is Command of my Lord.” Of knowledge, it is only a little that is communicated to you.

তারা তোমাকে রুহ (আত্মা) সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। বলুন- রুহ আমার প্রভুর আদেশ’ এই জ্ঞানের সামান্যই তোমাকে দেওয়া হয়েছে। [১৭:৮৫]

চলুন দেখি, চৌম্বক ক্ষেত্র কীভাবে আদেশ’ বা Command হিসেবে কাজ করে।

দৃশ্যপট ১: 

আমাদের এই পৃথিবীর একটি বিশাল চৌম্বক ক্ষেত্র রয়েছে। যা ‘সৌর বায়ুকে’ পৃথিবীতে প্রবেশে বাধা দেয়। ছবিতে (১.২) দেখা যাচ্ছে- কীভাবে পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র সৌর বায়ু প্রতিরোধ করছে। চৌম্বক ক্ষেত্র নির্দেশ দিচ্ছে যে- “খবরদার! পৃথিবীতে ঢুকো না।” সৌর বায়ু পৃথিবীতে ঢুকলে গাছপালা-জীবজন্তু জ্বলে-পুড়ে ছারখার হয়ে যেতো এবং পৃথিবীতে প্রাণের বিকাশ হতো না। যেমন- অন্যান্য কোনও গ্রহে হয়নি। 

                                                
                                                                                   ছবি ১.২: “পৃথিবীতে ঢুকো না”


                                                                          

পৃথিবীর এই চৌম্বক ক্ষেত্র কীভাবে এলো? কীভাবে পৃথিবীতে এত বিশাল চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি হলো ও লাখ লাখ বছর ধরে টিকে রইলো? 

বিজ্ঞানীরা বলছেন যে- ঘূর্ণন, পরিবাহী ও বৈদ্যুতিক পরিবাহী তরল এমন চৌম্বক ক্ষেত্র সৃষ্টি করতে পারে। এমনকি সূর্যের মতো গ্যাসীয় বস্তুর ক্ষেত্রেও আয়নিত গ্যাস চৌম্বক ক্ষেত্র সৃষ্টি করতে পারে। যা বিজ্ঞানীদের নিছক ধারণা বা প্রমাণহীন অনুমান। চৌম্বক ক্ষেত্রের জন্য অবশ্যই চৌম্বকশক্তি-সম্পন্ন চুম্বক-দণ্ড প্রয়োজন; যার কোনোটাই পৃথিবী বা সূর্যে নেই। এ দাবিটিও বিজ্ঞানীরাই করছেন।


প্রকৃতপক্ষে, এই ‘শক্তি ক্ষেত্র’ বা ‘ফোর্স ফিল্ড’- ‘মহান আল্লাহর আদেশ’ হিসাবে বিশাল গ্রহ (জড় পদার্থ) পৃথিবীতে সুষ্ঠুভাবে কাজ করছে। পৃথিবীর জীবন্ত প্রাণীজগৎ এই দুর্দান্ত ‘চৌম্বক ক্ষেত্র’ ছাড়া কোনোভাবেই এক মুহূর্ত টিকতে পারে না। মাথার ওপর চৌম্বক ক্ষেত্রের এই ছাদ না থাকলে মুহূর্তেই ধ্বংস হয়ে যেত সবকিছু।  

যিনি পৃথিবীকে তোমাদের জন্য বানিয়েছেন বিশ্রামের স্থান আর আকাশকে বানিয়েছেন ছাদ… 
He who made the earth a place of repose for you, and the sky a canopy..  [০২:২২]

 দৃশ্যপট 

মূলত চৌম্বকত্ব- – ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক শক্তি (electromagnetic force) দিয়ে সৃষ্ট। এটি  প্রকৃতির অন্যতম মৌলিক শক্তি। একটি চলমান বৈদ্যুতিক চার্জ এর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হলে লম্বভাবে একটি চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি হয়। মনে হয় যেন, চৌম্বক ক্ষেত্র ইলেকট্রনগুলোকে ধরে রাখছে ও যথাযথভাবে চারদিকে চৌম্বক ক্ষেত্র ধরে রাখার নির্দেশ দিচ্ছে।


চিত্র ১.৩: চৌম্বক ক্ষেত্র বিদ্যুৎকে (ইলেক্ট্রন কণাগুলো) ধরে রাখে ও চারদিকে থাকার নির্দেশ দেয়


এই ক্ষেত্রেওচৌম্বক ক্ষেত্র বা ম্যাগনেটিক ফিল্ড Command বা আদেশের মতো কাজ করছে।

[যখন ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক তরঙ্গ মহাকাশে ছড়িয়ে পড়েতখন তা চৌম্বক ক্ষেত্র ও
বৈদ্যুতিক ক্ষেত্র একে অপরের সঙ্গে ছবির মতো ৯০ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে থাকে।]

  • The Field is sole governing agency of the particle” – Albert Einstein.
  • ক্ষেত্র হল কণার একমাত্র নিয়ন্ত্রক সংস্থা– আলবার্ট আইনস্টাইন

অন্যকথায়, পৃথিবীর এই চৌম্বক ক্ষেত্রটি পৃথিবীর আত্মা- যা পৃথিবীর চারদিকে ছাদের মতো ঘিরে রেখেছে। এটি সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মিকে পৃথিবীতে ঢুকতে দেয় না।


১. খ. আকর্ষণকারী আত্মা  Soul which attracts

বিদ্যুৎ চৌম্বক ক্ষেত্র শুধু বিকর্ষণই করে না- এই শক্তি আকর্ষণ করে বা ধরে রাখে। পরমাণুর গাঠনিক বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করলেই তা সুস্পষ্টভাবে বোঝা যায়।

আমরা জানি, প্রোটন কণা একে অপরকে বিকর্ষণ করে। একটি পরমাণুর শক্তিশালী নিউক্লিয়ার ফোর্স ফিল্ড প্রোটন কণাকে নিউক্লিয়াসের মধ্যে টেনে ধরে রাখে (ছবি ১.৪)। কিন্তু নিউক্লিয়াস ইলেক্ট্রনকে তার দিকে আকর্ষণ করে না; দূরে সরিয়ে রাখে।


                              চিত্র ১.৪: পরমাণু


এসব বিশ্লেষণে বোঝা যাচ্ছে, একটি ফোর্স ফিল্ড হলো একটি আত্মা/ Soul বা রুহ্। যা প্রয়োজন অনুযায়ী আকর্ষণ ও বিকষর্ণের কাজ করে থাকে।

এই পর্যায়ে এসে, আমরা বুঝতে পারলাম যে, ফোর্স ফিল্ড ও আত্মা মূলত একই জিনিস; কারণ, তাদের ভূমিকা ও কাজ একই রকম। তারা আল্লাহর দেওয়া সূত্র অনুযায়ী সুনির্ধারিত ‘আদেশ’ মেনে চলে। এই বাস্তবতা আরও যাচাই করা হবে।

২. আত্মার প্রকারভেদ Types of Souls

মহাগ্রন্থ আল কুরআনে দুই প্রকার আত্মার কথা বলা হয়েছে:

  • ক. রুহ (প্রাথমিক আত্মা)/ Ruhh (Elementary Soul)
  • খ. নফস্ (যৌগিক আত্মা)/ Nafs (Composite Soul)

২ক. রুহ روح (মৌলিক আত্মা) Ruhh (Elementary Soul)

রুহ ( روح )কে প্রাথমিক বা মৌলিক আত্মা বলা যায়।

আরবি শব্দ রুহ-কে বাংলা ভাষায় আত্মা’ হিসাবে অনুবাদ করা হয়েছে।

তিনিই রাতের বেলা তোমাদের মৃত্যু দেন এবং তিনি জানেন দিনের বেলায় তোমরা যা করো…

It is He who takes your souls by night, and He knows what you do by day… [০৬:৬০]

কিন্তু রাতের বেলা ঘুমের সময় আমাদের শরীর ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গ জীবিত থাকে; তবে আমাদের সচেতনতা কাজ করে না। এই অবস্থাকে আল্লাহ মৃত্যু বলছেন। ঘুমের মধ্যে কেটে যাওয়া ১ মিনিট বা ১০ ঘণ্টা বা ৩০০ বছর বা লক্ষ কোটি বছরের মধ্যে আসলে কোনও পার্থক্য নেই। এই ধারণার ওপর ভিত্তি করে কল্পবিজ্ঞানে মহাকাশের অসীম দূরত্ব ভ্রমণে হাইবারনেট চিন্তার উদ্ভব হয়েছে।

আসহাবে কাহফ বা গুহার অধিবাসীরা ৩০০ বছর ঘুমিয়ে ছিল। কিন্তু তাদের বয়স বাড়ে নি, তারা মৃত্যুও বরণ করে নি। অর্থাৎ কল্পবিজ্ঞানের ধারণাটিকে স্বীকৃতি দেয় কুরআন।

ঘুমের সময় মানুষকে চেতনা বা consciousness দানকারী আত্মা চলে যায়; তাকেই মহান রব মৃত্যু বলছেন।

সৃষ্টির প্রথম মানব আদম’ কিন্তু তখনই চেতনা-প্রাপ্ত হন, যখন আল্লাহ তাঁকে রুহ দেন বা বিশেষ সেই আত্মা দেন। যাতে তিনি সচেতন হয়ে ওঠেন।

  •   আমি যখন তাকে সুগঠিত করবো এবং আমার পক্ষ থেকে তাতে রুহ সঞ্চার করে দেবো… 
  •   আমি যখন তাকে নিখুঁত ও সুষম করবো এবং তার মধ্যে সঞ্চার করে দেবো রূহ, তখন তোমরা তার প্রতি সাজদায় অবনত
    হয়ো 
     [১৫:২৯; ৩৮:৭২]

মাতৃগর্ভে যখন ধাপে ধাপে শিশুর দেহ গঠন হতে থাকে, তখন সে শিশু নড়াচড়া করে, এপাশ ওপাশ করে, ঘুমায়, খায়, শারীরিক বিকাশ হতে থাকে- শুধু তার সচেতনতা থাকে না। 

ভুমিষ্ঠ হবার পর কোনও এক মুহূর্তে শিশুটি সচেতনতা প্রাপ্ত হয় এবং চিৎকার করে কেঁদে ওঠে বা শব্দ করে। যেমন, সচেতনতা লাভ করেছিলেন আদম আ.- রুহ লাভের পর।
একইভাবে, এমন একটি বিস্ময়কর ঘটনা ঘটেছিল সুদূর অতীতে একবার, যখন কোনও দিন, মাস, আলো- ছিল না! প্রত্যেক বিষয়ের ‘রুহ’ সংযুক্ত করে দেবার পর দেখা দিয়েছিল নতুন আলো- একটি নতুন মহাবিশ্বে। জেগে উঠেছিল সুপ্ত, ঘুমন্ত মহা-বিশ্বজগত। সুরা কদরে সেই তথ্যই জানানো হয়েছে। (পড়ুন সুরা কদর)

  • পাঠানো হয়েছিল মালাইকা ও রুহ রবের নির্দেশে- প্রত্যেক কাজের জন্য। {৯৭:৪}
  • …বলো- রুহ হলো তোমার প্রভুর আদেশ। {১৭:৮৫} (Say, “The soul is the command of my Lord.)

এই রুহ হলো বিশেষ একটি আত্মা বা ফোর্স ফিল্ড- যা মানুষ লাভ করে মহান প্রভুর কাছ থেকে। কিন্তু আমাদের বিজ্ঞান এই রুহ আবিষ্কার করতে পারে নি।

মহাজগত বা বিশ্বপ্রকৃতি পর্যবেক্ষণ করে যে চারটি মৌলিক শক্তি-ক্ষেত্র বা ফোর্স ফিল্ড আবিষ্কার করা গেছে তা হলো- স্ট্রং নিউক্লিয়ার ফোর্স ফিল্ড (strong nuclear force field), ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ফোর্স ফিল্ড (আলো), উইক নিউক্লিয়ার ফোর্স ফিল্ড ও গ্র্যাভিটি। যা মূলত ‘স্রষ্টার আদেশ’ এবং এক ধরনের রুহ (Elementary বা মৌলিক আত্মা)। এই চারটি ফোর্স ফিল্ড-এর ওপর মানুষের কোনও নিয়ন্ত্রণ নাই। তারা সুনির্ধারিত আদেশ অনুসরণ করে চলেছে- ঠিক মানুষের রুহ বা আত্মার মতো। 

মহান আল্লাহ একটি ‘ফোর্স ফিল্ড’ ডিজাইন করেছেন,উন্নত করেছেন এবং তা স্থির বা ফিক্সড করে রেখেছেন। বিশাল গ্যালাক্সি থেকে শুরু করে ক্ষুদ্রতম কণা- ইলেকট্রন পর্যন্ত সবই নির্ধারিত ফোর্স ফিল্ডের আওতায় কাজ করে। 

তাই একটি ‘পরিকল্পিত ফোর্স ফিল্ড’-কে আমরা একটি রুহ (এলিমেন্টারি বা মৌলিক আত্মা) বলতে পারি; যার সুনির্দিষ্ট কাজ করে এবং এই কাজে বাধা দেওয়ার শক্তি কারও নেই।

ছবির মাধ্যমে আবিষ্কৃত চারটি ‘রুহ’ বা প্রভুর নির্দেশকে দেখা যাক।


অতএব, আমরা একটি রুহকে (একটি প্রাথমিক আত্মা) একটি পরিকল্পিত ফোর্স ফিল্ড হিসাবে সংজ্ঞায়িত করতে পারি- যা সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে কাজ করে এবং সেসব রুহ দ্বিতীয় পর্যায়ের আত্মাকে সক্রিয় করে। এই দ্বিতীয় পর্যায়ের আত্মা হলো নফস্


২খ. নফস্نفس   (যৌগিক আত্মা)

 দ্বিতীয় পর্যায়ের আত্মাকে বলা হয় নফস্’ (نفس)

Grade