আল্লাহর গুণবাচক নাম গুরু। (রহমান, ৪ আয়াত) কীভাবে গুরু নামটি
আল্লাহর একত্ববাদের নাম হল? তবে তার আগে জানতে হবে একত্ববাদের দ্বীন কী?
আল্লাহর একত্ববাদে আত্মসমর্পণ করাই হচ্ছে আল্লাহর মনোনীত দ্বীন। (ইমরান, ৮৫
আয়াত)। অর্থাৎ দ্বীনের দৃষ্টিভঙ্গির ক্ষেত্রে একে একত্ববাদ আর একের অধিক
শেরেকবাদ। দ্বীনের দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপারে কোনো অবস্থায়ই শরিক বা ভাগাভাগি
করা যাবে না। এই মর্মে আল্লাহ বলেন, দ্বীনের ব্যাপারে সকল কিছুই একমাত্র
আল্লাহরই প্রাপ্য। (যুমার, ৩ আয়াত)। তবে দ্বীনের ব্যাপারে যদি কেউ রসূলকে
বাদ দিয়ে একমাত্র আল্লাহকেই ডাকে তাহলে সে ইবলিসের অনুসারী কাফের হবে।
কারণ ইবলিসও রসূলকে বাদ দিয়ে শুধু আল্লাহকেই ডাকে। অনেকের ধারণা ইবলিস
হয়ত আল্লাহকে প্রভু বলে না। কিন্তু না। লান্নত ঘোষণার পরও ইবলিস আল্লাহকে
প্রভু বলে। (হিযর, ৩৬ আয়াত)। তাই যারা দ্বীনের ব্যাপারে রসূলকে বাদ দিয়ে
শুধু আল্লাহকেই ডাকে সে ইবলিসের অনুসারী কাফের হবে এতে কোনো সন্দেহ নেই।
তাহলে রসূলকে কোনো অবস্থাতেই দ্বীনের ব্যাপারে বাদ দেওয়া যাবে না। আবার
রসূলকে নিতে গেলে দ্বীনের দৃষ্টিভঙ্গি দুই দিকে চলে যাচ্ছে, সেক্ষেত্রে
আল্লাহর সাথে রসূলের নাম জপনা এসে যাচ্ছে, ফলে শেরেকবাদ গণ্য হচ্ছে। এই
মর্মে আল্লাহ বলেন, তোমরা আল্লাহর সাথে কাউকে ডেক না। (জিন, ১৮ আয়াত)।
কাজেই দেখা যাচ্ছে রসূলকে বাদ দিলেও কাফের আবার আল্লার সাথে রসূলকে ডাকলেও
শেরেক। আবার যদি কেউ আল্লাহকে বাদ দিয়ে দ্বীনের ব্যাপারে শুধু রসূলকেই
ডাকে তাহলে সে কাফের হবে। এ ব্যাপারে আল্লাহ বলেন, তোমরা আল্লাহকে বাদ
দিয়ে কাউকে ডেকো না (ইউনুস, ১০৬ আয়াত)। তাহলে সমস্যাটা এমন যে, আল্লাহকে
বাদ দিলেও কাফের, আবার রসূলকে বাদ দিলেও কাফের। আবার আল্লাহর সাথে রসূলকে
ডাকলেও শেরেক এই শেরেক এড়ানোর জন্য আল্লাহ ও রসূলের গুণবাচক নামের মধ্য
হতে এমন একটি কমন নাম নিতে হবে যে নামে আল্লাহ ও রসূলকে একাকার ও
অবিচ্ছিন্নভাবে ডাকা যায়। আমরা জানি রসূলের গুণবাচক নাম গুরু।(বাকারা, ১৫১
আয়াত)। (ইমরান, ১৬৪ আয়াত)। আল্লাহর গুণবাচক নাম গুরু (রহমান, ৪ আয়াত)।
এই গুরু নামই আল্লাহ ও রসূলের কমন গুনবাচক নাম। তাই এই গুরু নাম নিলেই
আল্লাহ ও রসূলকে একাকার ও অবিচ্ছিন্নভাবে ডাকা হয়ে যায় আবার শেরেকও হয়
না। তাই দ্বীনের ব্যাপারে এই গুরু নামই হচ্ছে আল্লাহর একত্ববাদের নাম। তাই
মোমেনগণ গুরু নামে আল্লাহ ও রসূলকে একাকার ও অবিচ্ছিন্নভাবে ডাকে। এই
মমিনদের উদ্দেশ্যে আল্লাহ বলেন, "যারা আল্লাহ ও রসূলে বিশ্বাস করে এবং
তাদের মধ্যে ফারাক বা পৃথক করে না অর্থাৎ ংবঢ়ধৎবঃব করে না তাদের জন্য মহা
পুরস্কার" (নেছা, ১৫২ আয়াত)। রসুলের সাথেই আল্লাহ আছেন (সুরা হাদিদ-৪)।
অর্থাৎ রসুলের হাত আল্লাহর হাত, (ফাতহ, ১০ আয়াত)। আবার রসূলের অনুসরণ করা
আল্লাহকেই ভালবাসা। (ইমরান, ৩১ আয়াত)। রসুলের আনুগত্য করা আল্লাহরই
আনুগত্য করা। (নেছা, ৮০ আয়াত)। আবার রসূলের মধ্যে স্বয়ং আল্লাহই সক্রিয়
আছেন। (আনফাল, ১৭আয়াত)। এই সকল আয়াত অনুসারে মমিনগণ রসূল এর মধ্যে রসূলকে
বিলীন করে ঐ সুরতে আল্লাহকে বর্তমান করে রসূল এবং আল্লাহকে একাকার ও
অবিচ্ছিন্নভাবে বিশ্বাস করে। তাই রসূল তথা গুরু নামই আল্লাহ ও রসূলের
একত্ববাদের নাম।
গুরু নাম আল্লাহর একত্ববাদের নাম।
যেহেতু আল্লাহর গুণবাচক নাম গুরু (রহমান, ৪ আয়াত) আবার রসুলের গুণবাচক নাম গুরু (বাকারা-১৫১) আর এই গুরু নামই দ্বীনের ব্যাপারে আল্লাহর একটি উত্তম গুণবাচক নাম। কারণ ইবলিস গুরু নামে রসূলকে ডাকে না। গুরু নামে আল্লাহকেও ডাকে না। যদি রসূলকে গুরু নামে ডাকে তাহলে রসূলকে আল্লাহ বলার সামিল হয়ে যায়। কারণ আল্লাহর গুণবাচক নাম তো গুরু।সেক্ষেত্রে গুরু নাম নিলে আল্লাহ রসূলকে একাকার ও অবিচ্ছিন্নভাবে ডাকা হয়ে যায়। কিন্তু ইবলিস কখনও আল্লাহ রসূলকে একাকার ও অবিচ্ছিন্নভাবে ডাকবে না। যদি এমনভাবে ডাকে তাহলে রসুলের হাত আল্লাহর হাত বিশ্বাস করা হয়ে যায়। রসুলের মধ্যেই আল্লাহ পাক সক্রিয় এমনই বিশ্বাস করা হয়ে যায়। (বি: দ্র:- গুরু নাম আল্লাহর একত্ববাদের নাম এই অধ্যায়ে বিস্তারিত দেখুন)। সেক্ষেত্রে রসূল কাবাই আল্লাহকে সেজদা দেওয়া জরুরি হয়ে যায়। কারণ ইবলিস আদম কাবায় সেজদা না দিয়েই কাফের। (বাকারা, ৩৪ আয়াত)। সেহেতু ইবলিস কখনও রসূলকাবায় আল্লাহকে সেজদা দেবে না। আর তাই ইবলিস আল্লাহ ও রসূলকে একাকার ও অবিচ্ছিন্নভাবে ডাকবে না বিধায়ই ইবলিস কখনও গুরু নামে আল্লাহ ও রসূলকে ডাকে না। যে নামে ইবলিস আল্লাহ রসূলকে ডাকে না সেই নামই আল্লাহর উত্তম গুণবাচক নাম। এই জন্যই আল্লাহ বলেন তোমরা ইবলিসের অনুসরণ করোনা (বাকারা, ২০৮ আয়াত)। তাই মমিনগণ ইবলিসের অনুসরণ থেকে বিরত থাকার লক্ষ্যেই গুরু নামে আল্লাহকে ডাকে।
এখানে উল্লেখ্য যে, আল্লাহ বলেন, তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর, রসূলের আনুগত্য কর এবং উলিল আমরগণের আনুগত্য কর (নেসা, ৫৯ আয়াত)। এই আয়াতের মধ্যে দুই ধরনের আনুগত্যের কথা বলা হয়েছে। (১) একটি হচ্ছে দ্বীনের ক্ষেত্রে আনুগত্য করা, (২) অপরটি হচ্ছে দুনিয়াবী ক্ষেত্রে আনুগত্য করা। এখন আমাদের জানতে হবে, দ্বীনের ক্ষেত্রে আনুগত্য কাকে বলে আর দুনিয়াবী ক্ষেত্রে আনুগত্য কাকে বলে। অর্থাৎ দ্বীনের ক্ষেত্রে আনুগত্য আর দুনিয়াবী ক্ষেত্রে আনুগত্য পার্থক্য কী? যে আনুগত্য আল্লাহ পর্যন্ত পৌছে সে আনুগত্যটা দ্বীনের আনুগত্য। কারণ দ্বীনের বিষয়ে সকল কিছু আল্লাহ পাবে (জুমার, ৩ আয়াত) আর যে আনুগত্য দুনিয়াবী শৃংখলা ও শান্তি রক্ষার জন্য করা, সে আনুগত্য দুনিয়াবী আনুগত্য। যেহেতু রসূলের আনুগত্য করলে আল্লাহর আনুগত্য করা হয় (নেছা, ৮০ আয়াত) সেহেতু রসূলের আনুগত্য দ্বীনের আনুগত্যে গণ্য। পক্ষান্তরে উলিল আমরগণের আনুগত্য করলে সে আনুগত্য আল্লাহর হবে কিংবা রসূলের হবে এমন কোনো আয়াত নেই বিধায় উলিল আমরগণের আনুগত্য দ্বীনের আনুগত্যে গণ্য হচ্ছে না। শুধু দুনিয়াবী শৃংখলা ও শান্তি রক্ষার উদ্দেশ্যে উলিল আমর গণের আনুগত্য করতে বলা হয়েছে বিধায় উলিল আমরগণের আনুগত্য দুনিয়াবী আনুগত্যে গণ্য। এখন আমরা এই দুই আনুগত্যের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করি। সেক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, দ্বীনের আনুগত্যে সেজদা থাকতে হবে, কারণ সকল দ্বীনের ক্ষেত্রে সকল কিছুই আল্লাহর জন্য। (জুমা, ৩ আয়াত)। এবং সকল সেজদা আল্লাহর জন্য। (সূরা-জ্বীন, ১৮ আয়াত)। আর দুনিয়াবী আনুগত্যের ক্ষেত্রে কোনো সেজদা থাকবে না। কিন্তু রসূলের আনুগত্যের ভিতরে সেজদা আছে, কারণ আদম রসূল আল্লাহর খলিফা। (সূরা-বাকারা, ৩০ নংআয়াত)। আর আল্লাহর খলিফা আদম রসূল সেজদা পায়। (সূরা-হিযর, ২৯ আয়াত)। তাহলে রসূলের আনুগত্য সেজদা আছে প্রমাণিত হয়। আমরা জানি সেজদা যেখানে দ্বীন সেখানে। অতএব রসূলের আনুগত্য দ্বীনের আনুগত্যে প্রমাণিত। পক্ষান্তরে উলিল আমরগণের আনুগত্যে কোনো সেজদা নেই বিধায় এদের আনুগত্য দুনিয়াবী ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। কাজেই উলিল আমরগণ কখনো রসূল নয় কিংবা রসূলের বিকল্প নয়। কিংবা এরা নায়েবে রসূলও নয়। আবার সূরা-নেসার ৫৯ আয়াত অনুসারে অনেকেই রসুলের বিকল্প হিসেবে দ্বীনের ক্ষেত্রে উলিল আমরগণের আনুগত্য করে থাকে। এই আয়াতে এসেছে রসূলের আনুগত্য কর এবং উলিল আমরগণের আনুগত্য কর। যেহেতু এই আয়াতে রসূল এবং উলিল আমরগণের মাঝখানে 'এবং' কথা এসেছে, তাহলে দুইজনের আনুগত্য করাই ফরয। যদি দুইয়ের মাঝখানে 'অথবা' কথা আসত, তাহলে উলিল আমরগণ রসূলের বিকল্প হিসেবে প্রমাণ হতো। যেহেতু ঐ আয়াতে দুই এর মাঝখানে এবং কথা এসেছে এতে প্রমাণ হয় যে, উলিল আমরগণ রসূলের বিকল্প নয়। তারপরও নেসার ৫৯ আয়াতটি যখন নাজেল হয়েছে তখনতো নবী (সা.) জীবিত। এই আয়াত নাজিল হওয়ার পরে দ্বীনের ক্ষেত্রে নবী (সা.) এর পরও তৃতীয় ব্যক্তির আনুগত্য করা প্রয়োজন হতো। কেননা উক্ত আয়াতটি তখনকার মোমিনদের জন্য প্রয়োজন ছিল। তৎকালীন সময়ে দ্বীনের ক্ষেত্রে নবী (সা.) ভিন্ন অন্য কোনো তৃতীয় ব্যক্তির আনুগত্য মোমিনগণ করেছে এমন কোনো প্রমাণ নেই। বিধায় একমাত্র রসূল ভিন্ন দ্বীনের ক্ষেত্রে তৃতীয় কোনো ব্যক্তির অস্থিত্ব নেই বিধায় যারা নেসার ৫৯ আয়াত অনুসারে উলামাগণকে কিংবা উলিল আমরগণকে কিংবা তাবলিগের আমীর গণকে কিংবা তিন পন্থী পীরগণকে কিংবা মসজিদের বেতনভুক্ত ইমামগণকে রসূলের বিকল্প হিসেবে দ্বীনের ক্ষেত্রে আনুগত্য করছে তারা শেরেকে গণ্য আছে। কারণ দ্বীনের ক্ষেত্রে একত্ববাদ ছাড়া তিন পন্থীর কোনো অস্তিত্ব নেই। তিন পন্থী বলতে এখানে আল্লাহ, রসূল এবং পীর। এই তিন তত্ব এসে যায়। সেক্ষেত্রে পূর্ব আলোচনা অনুসারে আল্লাহ ও রসূল একত্ববাদে গণ্য হয়। কারণ রসূলের আনুগত্য আল্লাহর আনুগত্যে গণ্য হয়। কিন্তু রসূল ভিন্ন তৃতীয় ব্যক্তিকে একত্ববাদে আনার কোনো সুযোগ নেই। যেহেতু আল্লাহ ও রসূলকে একত্ববাদে আনা যাচ্ছে কিন্তু তৃতীয় কোনো ব্যক্তিকে একত্ববাদে আনা যাচ্ছে না বিধায় আল্লাহ বলেন, তোমরা আল্লাহ বিশ্বাস কর ও রসূল বিশ্বাস কর কিন্তু তিন বলিও না। (সূরা-নেসা, ১৭১ আয়াত)। এই আয়াত অনুসারে তিন পন্থীরা বা তিন পন্থী পীরপন্থীরা বা নায়েবে রসূল পন্থীরা শেরেকে গণ্য। কারণ এই তিন পন্থীরা বলে আল্লাহ তো তিনের ভিতরে একজন (মায়েদা-৭৩)। তারপরও যদি কেউ নেসার ৫৯ আয়াতটি দ্বীনের ক্ষেত্রে তিন পন্থী বা তিন পন্থী পীরপন্থী প্রমাণ করে তাহলে সেই তিনপন্থী বুঝটা নেসার ১৭১ আয়াতের এবং সূরা মায়েদার ৭৩নং আয়াতে পরিপন্থী বলে গণ্য হবে। কিন্তু পবিত্র কোরআনের এক আয়াত আরেকটি আয়াতের পরিপন্থী নয়। এটা নিশ্চিত। তাই নেসার ৫৯ আয়াতে উল্লিখিত উলিল আমরগণের আনুগত্য কর নির্দেশ দিয়ে দ্বীনের ক্ষেত্রে তিনপন্থী প্রমাণ করা থেকে বিরত থাকাই উচিত। বরং নেসার ৫৯ আয়াতে উ্েদ্দশ্য হচ্ছে, উলিল আমরগণের আনুগত্য কর বলতে রাষ্ট্র পরিচালনার কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিগণকে আনুগত্য করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যেমন রাজা, বাদশা, প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী এরাই উলিল আমর। তবে এদের আনুগত্য করার সময় আল্লাহর নিয়তে বা রসূল নিয়তে আনুগত্য করা যাবে না কিংবা এ আনুগত্যে কোনো মাথানত বা সেজদা থাকবে না। বরং এই নিয়ত করা যাবে যে, আমি আল্লাহর নির্দেশ মোতাবেক দুনিয়াবী ক্ষেত্রে এদের আনুগত্য করছি মাত্র। এরা দুনিয়াবী প্রশাসনিক কাজে নিয়োজিত বিধায় উলিল আমরগণের আনুগত্যের নির্দেশটা দুনিয়াবী আনুগত্যের নির্দেশ, এতে কোনো সন্দেহ নেই। এখন যদি কেউ নেসার ৫৯ আয়াতে উল্লিখিত উলিল আমরগণের আনুগত্যটা দ্বীনের ক্ষেত্রে নেয় তাহলে এই আয়াতের যে উদ্দেশ্য ছিল দুনিয়াবী আনুগত্যের নির্দেশ সেটা ব্যর্থ হবে। সেক্ষেত্রে আল্লাহর কোনো আয়াতের উদ্দেশ্য ব্যর্থ করার চেষ্টা করলে তার জন্য কঠিন শাস্তি জাহান্নাম। (সূরা-হজ, ৫১ আয়াত)।
এখানে উল্লেখ্য যে, আল্লাহ বলেন, তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর, রসূলের
আনুগত্য কর এবং উলিল আমরগণের আনুগত্য কর (নেসা, ৫৯ আয়াত)। এই আয়াতের
মধ্যে দুই ধরনের আনুগত্যের কথা বলা হয়েছে। (১) একটি হচ্ছে দ্বীনের
ক্ষেত্রে আনুগত্য করা, (২) অপরটি হচ্ছে দুনিয়াবী ক্ষেত্রে আনুগত্য করা।
এখন আমাদের জানতে হবে, দ্বীনের ক্ষেত্রে আনুগত্য কাকে বলে আর দুনিয়াবী
ক্ষেত্রে আনুগত্য কাকে বলে। অর্থাৎ দ্বীনের ক্ষেত্রে আনুগত্য আর দুনিয়াবী
ক্ষেত্রে আনুগত্যের পার্থক্য কী? যে আনুগত্য আল্লাহ পর্যন্ত পৌঁছে সে
আনুগত্যটা দ্বীনের আনুগত্য। কারণ দ্বীনের বিষয়ে সকল কিছু আল্লাহ পাবে
(জুমার, ৩ আয়াত) আর যে আনুগত্য দুনিয়াবী শৃঙ্খলা ও শান্তি রক্ষার জন্য
করা, সে আনুগত্য দুনিয়াবী আনুগত্য। যেহেতু রসূলের আনুগত্য করলে আল্লাহর
আনুগত্য করা হয় (নেছা, ৮০ আয়াত) সেহেতু রসূলের আনুগত্য দ্বীনের আনুগত্যে
গণ্য। পক্ষান্তরে উলিল আমরগণের আনুগত্য করলে সে আনুগত্য আল্লাহর হবে কিংবা
রসূলের হবে এমন কোনো আয়াত নেই বিধায় উলিল আমরগণের আনুগত্য দ্বীনের
আনুগত্যে গণ্য হচ্ছে না। শুধু দুনিয়াবী শৃঙ্খলা ও শান্তি রক্ষার উদ্দেশ্যে
উলিল আমর গণের আনুগত্য করতে বলা হয়েছে বিধায় উলিল আমরগণের আনুগত্য
দুনিয়াবী আনুগত্যে গণ্য। এখন আমরা এই দুই আনুগত্যের মধ্যে পার্থক্য
নির্ণয় করি। সেক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, দ্বীনের আনুগত্যে সেজদা থাকতে হবে,
কারণ সকল দ্বীনের ক্ষেত্রে সকল কিছুই আল্লাহর জন্য। (জুমা, ৩ আয়াত)। এবং
সকল সেজদা আল্লাহর জন্য। (সূরা-জিন, ১৮ আয়াত)। আর দুনিয়াবী আনুগত্যের
ক্ষেত্রে কোনো সেজদা থাকবে না। কিন্তু রসূলের আনুগত্যের ভিতরে সেজদা আছে,
কারণ আদম রসূল আল্লাহর খলিফা। (সূরা-বাকারা, ৩০ আয়াত)। আর আল্লাহর খলিফা
আদম রসূল সেজদা পায়। (সূরা-হিযর, ২৯ আয়াত)। তাহলে রসূলের আনুগত্য সেজদা
আছে প্রমাণিত হয়। আমরা জানি সেজদা যেখানে দ্বীন সেখানে। অতএব রসূলের
আনুগত্য দ্বীনের আনুগত্যে প্রমাণিত। পক্ষান্তরে উলিল আমরগণের আনুগত্যে কোনো
সেজদা নেই বিধায় এদের আনুগত্য দুনিয়াবী ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। কাজেই
উলিল আমরগণ কখনো রসূল নয় কিংবা রসূলের বিকল্প নয়। কিংবা এরা নায়েবে
রসূলও নয়। আবার সূরা-নেসার ৫৯ আয়াত অনুসারে অনেকেই রসুলের বিকল্প হিসেবে
দ্বীনের ক্ষেত্রে উলিল আমরগণের আনুগত্য করে থাকে। এই আয়াতে এসেছে রসূলের
আনুগত্য কর এবং উলিল আমরগণের আনুগত্য কর। যেহেতু এই আয়াতে রসূল এবং উলিল
আমরগণের মাঝখানে 'এবং' কথা এসেছে, তাহলে দুইজনের আনুগত্য করাই ফরয। যদি
দুইয়ের মাঝখানে 'অথবা' কথা আসত, তাহলে উলিল আমরগণ রসূলের বিকল্প হিসেবে
প্রমাণ হতো। যেহেতু ঐ আয়াতে দুই এর মাঝখানে এবং কথা এসেছে এতে প্রমাণ হয়
যে, উলিল আমরগণ রসূলের বিকল্প নয়। তারপরও নেসার ৫৯ আয়াতটি যখন নাজেল
হয়েছে তখনতো নবী (সা.) জীবিত। এই আয়াত নাজিল হওয়ার পরে দ্বীনের ক্ষেত্রে
নবী (সা.) এর পরও তৃতীয় ব্যক্তির আনুগত্য করা প্রয়োজন হতো। কেননা এই
আয়াতটি তখনকার মোমিনদের জন্য প্রয়োজ্য ছিল। তৎকালীন সময়ে দ্বীনের
ক্ষেত্রে নবী (সা.) ভিন্ন অন্য কোনো তৃতীয় ব্যক্তির আনুগত্য মোমিনগণ করেছে
এমন কোনো প্রমাণ নেই। বিধায় একমাত্র রসূল ভিন্ন দ্বীনের ক্ষেত্রে তৃতীয়
কোনো ব্যক্তির অস্থিত্ব নেই বিধায় যারা নেসার ৫৯ আয়াত অনুসারে উলামাগণকে
কিংবা উলিল আমরগণকে কিংবা তাবলিগের আমীর গণকে কিংবা তিন পন্থী পীরগণকে
কিংবা মসজিদের বেতনভুক্ত ইমামগণকে রসূলের বিকল্প হিসেবে দ্বীনের ক্ষেত্রে
আনুগত্য করছে তারা শেরেকে গণ্য আছে। কারণ দ্বীনের ক্ষেত্রে একত্ববাদ ছাড়া
তিন পন্থীর কোনো অস্তিত্ব নেই। তিন পন্থী বলতে এখানে আল্লাহ, রসূল এবং পীর।
এই তিন তত্ব এসে যায়। সেক্ষেত্রে পূর্ব আলোচনা অনুসারে আল্লাহ ও রসূল
একত্ববাদে গণ্য হয়। কারণ রসূলের আনুগত্য আল্লাহর আনুগত্যে গণ্য হয়।
কিন্তু রসূল ভিন্ন তৃতীয় ব্যক্তিকে একত্ববাদে আনার কোনো সুযোগ নেই। যেহেতু
আল্লাহ ও রসূলকে একত্ববাদে আনা যাচ্ছে কিন্তু তৃতীয় কোনো ব্যক্তিকে
একত্ববাদে আনা যাচ্ছে না বিধায় আল্লাহ বলেন, তোমরা আল্লাহ বিশ্বাস কর ও
রসূল বিশ্বাস কর কিন্তু তিন বলিও না। (সূরা-নেসা, ১৭১ আয়াত)। এই আয়াত
অনুসারে তিন পন্থীরা বা তিন পন্থী পীর পন্থীরা বা নায়েবে রসূল পন্থীরা
শেরেকে গণ্য। কারণ এই তিন পন্থীরা বলে আল্লাহ তো তিনের ভিতরে একজন
(মায়েদা-৭৩)। তারপরও যদি কেউ নেসার ৫৯ আয়াতটি দ্বীনের ক্ষেত্রে তিন পন্থী
বা তিন পন্থী পীরপন্থী প্রমাণ করে তাহলে সেই তিনপন্থী বুঝটা নেসার ১৭১
আয়াতের এবং সূরা মায়েদার ৭৩নং আয়াতের পরিপন্থী বলে গণ্য হবে। কিন্তু
পবিত্র কোরআনের এক আয়াত আরেকটি আয়াতের পরিপন্থী নয়। এটা নিশ্চিত। তাই
নেসার ৫৯ আয়াতে উল্লিখিত উলিল আমরগণের আনুগত্য কর নির্দেশ দিয়ে দ্বীনের
ক্ষেত্রে তিনপন্থী প্রমাণ করা থেকে বিরত থাকাই উচিত। বরং নেসার ৫৯ আয়াতে
উ্েদ্দশ্য হচ্ছে, উলিল আমরগণের আনুগত্য কর বলতে রাষ্ট্র পরিচালনার কাজে
নিয়োজিত ব্যক্তিগণকে আনুগত্য করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যেমন রাজা,
বাদশা, প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী এরাই উলিল আমর। তবে এদের আনুগত্য করার
সময় আল্লাহর নিয়তে বা রসূল নিয়তে আনুগত্য করা যাবে না কিংবা এ আনুগত্যে
কোনো মাথানত বা সেজদা থাকবে না। বরং এই নিয়ত করা যাবে যে, আমি আল্লাহর
নির্দেশ মোতাবেক দুনিয়াবী ক্ষেত্রে এদের আনুগত্য করছি মাত্র। এরা
দুনিয়াবী প্রশাসনিক কাজে নিয়োজিত বিধায় উলিল আমরগণের আনুগত্যের
নির্দেশটা দুনিয়াবী আনুগত্যের নির্দেশ, এতে কোনো সন্দেহ নেই। এখন যদি কেউ
নেসার ৫৯ আয়াতে উল্লিখিত উলিল আমরগণের আনুগত্যটা দ্বীনের ক্ষেত্রে নেয়
তাহলে এই আয়াতের যে উদ্দেশ্য ছিল দুনিয়াবী আনুগত্যের নির্দেশ সেটা ব্যর্থ
হবে। সেক্ষেত্রে আল্লাহর কোনো আয়াতের উদ্দেশ্য ব্যর্থ করার চেষ্টা করলে
তার জন্য কঠিন শাস্তি জাহান্নাম। (সূরা-হজ, ৫১ আয়াত)।
যেহেতু তিন পন্থী পীর পন্থীরা বা নায়েবে রসূল পন্থীরা শেরেকে গণ্য, ফলে
যারা শেরেক করে ওরা মুশরিক। আল্লাহ বলেন, তোমরা মুশরিকগণকে উপেক্ষা কর।
(-হিযর, ৯৪ আয়াত)। যেহেতু শেরেক সবচেয়ে বড় পাপ, কারণ শেরেকের অপরাধ
ক্ষমা করা হবেনা। (নেসা, ৪৮ আয়াত)। তাই মুশরিকগণ পাপিষ্ঠ। আল্লাহ বলেন,
তোমরা পাপিষ্টগণের সঙ্গ ধারণ করিওনা। (দাহর, ২৪আয়াত)। পীর পন্থীরা তিন
পন্থী এই জন্য যে, এরা আল্লাহ, রসূল ও পীর এই তিন তত্বে বিশ্বাসী হয়ে একে
অপরকে পৃথক করে বা ংবঢ়ধৎবঃব করে বা ফারাক করে বিধায় তিনপন্থীতে গণ্য, যা
দ্বীনের ক্ষেত্রে শেরেক। এরা বলে আল্লাহ এই তিনের মধ্যে একজন
(সূরা-মায়েদা, আয়াত-৭৩)। কাজেই সূরা-নেসা, ১৭১ আয়াত এবং সূরা-মায়েদা,
আয়াত-৭৩ অনুসারে তিন পন্থী পীর পন্থীরা বা নায়েবে রসূলগণ শেরেকে গণ্য।
আবার অনেকে নায়েবী রসূল নামে দ্বীনের ক্ষেত্রে তিনপন্থী বুঝ নিয়ে আসে,
তাদের জন্য বলতে হচ্ছে যে কারণ সেজদার মালিক আল্লাহ। সূরা-জিন, ১৮ আয়াত।
আর আদম আল্লাহর খলিফা (সূরা-বাকারা, ৩০ আয়াত)। তাই আদম সেজদা পায়।
(সূরা-হিযর, ২৯ আয়াত)। ইবলিস আদমকে সেজদা না দিয়েই কাফের (সূরা-বাকারা,
৩৪ আয়াত)। মানুষ যখন আদম কাবায় আল্লাহকে সেজদা দিবে তখন সে ইবলিস থেকে
পবিত্র হবে। এইভাবে রসূল মানুষকে পবিত্র করেন। (সূরা-বাকারা, ১৫১ আয়াত)।
আল্লাহর খলিফার কাবায় সেজদার মাধ্যমে মানুষকে ইবলিসমুক্ত করার লক্ষ্যে
আল্লাহ তার খলিফার ধারা অব্যাহত রাখেন এই ভাবে যে, যারা ইমান আনবে এবং
সৎকর্ম করবে তাদের মধ্য থেকে আল্লাহ পৃথিবীতে তাঁর খলিফা নির্ধারন করেন।
(সূরা-নূর, ৫৫আয়াত)। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা তাকে রিসালাতের ভার অর্পণ করেন
(সূরা-আনআম, ১২৪ আয়াত)। এই প্রক্রিয়ায় প্রত্যেক নবী তার শেষাংশে আল্লাহর
খলিফা হিসেবে রসূল রেখে যান। (সূরা-ইমরান, ৮১ আয়াত)। সেই রসূলগণ তার
শেষাংশে একই প্রক্রিয়ায় আল্লাহর খলিফা হিসেবে পরবর্তী রসূল রেখে যান।
রসূল রাখার উদ্দেশ্য হচ্ছে আল্লাহর খলিফাকে সমাজে প্রতিষ্ঠিত রাখা। আবার
রসূলগণের মাধ্যমে যে রসূলগণ আসছে এরা যদি স্বয়ং আল্লাহর খলিফা না হয়
তাহলে সমাজে আল্লাহর খলিফা প্রতিষ্ঠিত থাকছে না। আল্লাহর খলিফা না থাকলে
আদম কাবায় সেজদার মাধ্যমে মানুষ ইবলিসমুক্ত হতে পারছে না। আর তাই মানুষকে
ইবলিসমুক্ত করার লক্ষ্যে আল্লাহর খলিফা দরকার বিধায় এই রসূলগণই আল্লাহর
খলিফা। যেহেতু এই রসূলগণ আল্লাহর খলিফা, সেহেতু এরা কোনো অবস্থায় নায়েবী
রসূল নয় বরং এরা তথা সম্যক গুরুগণই স্বয়ং রসূল। এই রাসূলের আনুগত্য করলেই
সে আনুগত্য আল্লাহর হবে। (সূরা নেসা : ৮০) অনেকেই উলামাগণকে কিংবা উলিল
আমরগণকে, কিংবা তাবলীগের আমীরগণকে, কিংবা পীরগণকে, কিংবা মসজিদের বেতনভুক্ত
ইমামগণকে, নায়েবী রসূলজ্ঞানে বিশ্বাস করে থাকে। তাদের এ বিশ্বাসের কোনো
ভিত্তি নেই, কারণ নায়েবী রসূল শব্দ কোরআনে নেই। কাজেই নায়েবী রসূলপন্থী
কিংবা তিন পন্থী পীরপন্থী বা তিন পন্থীরা শেরেকে গণ্য। এদের পরিচয় হচ্ছে
এরা আল্লাহ ও রসূলকে একাকার ও অবিচ্ছিন্নভাবে বিশ্বাস করে রসূল কাবায়
আল্লাহকে সেজদা করে না বিধায় এরা ইবলিসের অনুসারী এতে কোনো সন্দেহ নেই।
৪৮ নং সূরার নাম ফাতহ, আর ফাতহ শব্দের অর্থ 'জয়' (আরবি অভিধান পৃ.
১৮৬১)। অভিধান দিশারি পৃ. ১১২) কাজেই 'জয়' পবিত্র কুরআনের ভাষা। 'জয়'
বলতে নিষেধ নেই। আর যিনি কোনো কিছু শিক্ষা দেন তিনিই গুরু বা শিক্ষক আর
এখানে গুরু বলতে আমরা আল্লাহকে বুঝি। কারণ আল্লাহর গুণ বাচক নাম 'গুরু'
(আররাহমান, ৪ আয়াত)। এই আয়াতে আল্লিম শব্দ এসেছে, যিনি আল্লিম করেন তিনিই
মুয়াল্লিম। আর মুয়াল্লিম শব্দের অর্থ শিক্ষক বা গুরু (আরবি অভিধান, পৃ.
২২৭০)। (অভিধান দিশারি, পৃ. ১০৫), যেহেতু আল্লাহ মানুষকে বয়ান বা ভাষা
শিক্ষা দেন সেহেতু আল্লাহ গুরু হতে কোন সন্দেহ নেই। আর তাই জয় গুরু দিয়ে
আমরা আল্লাহরই জয় কামনা করি। তবে এখানে একটি প্রশ্ন থেকে যায় যে, আল্লাহর
জয় কামনা করতে গিয়ে তো আল্লাহর জয় বললেই হয়, তবে কেন গুরুনামে
আল্লাহকে জয় দিতে হবে? এই প্রশ্নের উত্তর হচ্ছে, গুরু নামটি দ্বীনের
ব্যাপারে আল্লাহর একত্ববাদের নাম এবং গুরু নামটি হচ্ছে আল্লাহর উত্তম
গুণবাচক নাম। (বি: দ্র: গুরু নাম একত্ববাদের নাম ও গুরু নাম আল্লাহর উত্তম
গুণবাচক নাম এ অধ্যায়ে বিস্তারিত দেখুন)। এজন্যই গুরু নামে আল্লাহর জয়
কামনা করা হয়। তাই 'জয়গুরু' বলা হয়।
আবার অনেকে আছে তারা আল্লাহ ও রসূল বিশ্বাস করে, অথচ আল্লাহ ও রসূলকে
একাকার ও অবিচ্ছিন্নভাবে অর্থাৎ রসূলের হাতই আল্লাহর হাত এই বিশ্বাস করে
না, বরং তারা রসূল থেকে আল্লাহকে ফারাক করে বা ংবঢ়ধৎবঃব করে বা পৃথক করে,
তাদের উদ্দেশ্যে আল্লাহ বলেন-
আল্লাযিনা ইয়াকফুরুনা বিল্লাহি ওয়া রুসুলিহি ওয়া উরিদুনা আইয়ু
র্ফারিকু বায়নাল্লাহা ওয়া রুসুলিহি (অর্থাৎ উহারাই আল্লাহ ও রসুল
অস্বীকারকারী যাহারা ইচ্ছাকৃতভাবে রসুল থেকে আল্লাহকে ফারাক করে অর্থাৎ
রসুল থেকে আল্লাহকে ংবঢ়ধৎবঃব করে বা ফবংঃবহপব করে অর্থাৎ পৃথক করে বা
দূরত্ব করে (সূরা নেসা : ১৫০) অর্থাৎ এই আয়াত অনুসারে যারা রসূল থেকে
আল্লাহকে ংবঢ়ধৎবঃব করে উহারাই আল্লাহ ও রসূল অস্বীকারকারী কাফের।
পক্ষান্তরে যারা রসূল থেকে আল্লাহকে ংবঢ়ধৎবঃব করে না উহারাই মোমিন। এই
মর্মে আল্লা আরো বলেন, ওয়া য়াল্লাজিনা আমানুবিল্লাহি ওয়া রসুলিহি ওয়া
লাম উফারিরকু বায় আহাদা মিনহুম, উলাইকা সাওফা উতিহিম উযুরাহুম-বরং যারা
আল্লার রসুল বিশ্বাস করে এবং উহাদের মধ্যে কোনো ফারাক করে না। অর্থাৎ রসুল
থেকে আল্লাহকে ংবঢ়ধৎবঃব করে না বা ফবংঃবহপব) করে না অর্থাৎ পৃথক করে না বা
দূরত্ব করে না। উহাদের জন্য রহিয়াছে পুরস্কার (সুরা নেসা আয়াত-১৫২)।
এখানে উল্লেখ যে, এই আয়াত দিয়েই অনেকেই প্রমাণ করতে চায় যে, আল্লাহর
রসুলের মধ্যে কোন ফরভবৎবহঃ বা পার্থক্য নেই। কিন্তু তাদের কথা ঠিক নহে কারণ
আল্লাহ ও রসূলের মধ্যে অবশ্যই পার্থক্য আছে। রসুল হচ্ছে সৃষ্ট আল্লাহ
হচ্ছে শ্রষ্ঠা। রসুলের জন্ম-মৃত্যু আছে পক্ষান্তরে আল্লাহর জন্ম-মৃত্যু
নেই। রসুলের সাথে আল্লাহ আছে। অর্থাৎ রসূল হচ্ছে আল্লাহর সংশ্লিষ্ট।
আল্লাহর সাহায্য ছাড়া রসূল চলতে পারে না পক্ষান্তরে আল্লাহ কারো
মুখাপেক্ষী নহে আল্লাহ একক। তবে এই আয়াতের উদ্দেশ্য হবে রসুলের সাথে
আল্লাহ আছে বিধায় রসুল থেকে আল্লাহকে পৃথক না করে অর্থাৎ ংবঢ়ধৎবঃব না করে
আল্লাহ ও রসুল বিশ্বাস করা। আল্লাহ ও রসূলকে একাকার ও অবিচ্ছিন্নভাবে
বিশ্বাস করা। রসূলের হাতই আল্লাহর হাত (সূরা আল-ফাতহ-১০) অর্থাৎ রসূল সুরতে
আল্লাহ বিশ্বাস করে সেজদা দিলে রসূল সুরতে, স্বপ্নে আল্লাহর দর্শন হয়।
কারণ ইবলিশ যেহেতু আদম সেজদার সামিল হয় না (সূরা হিজর-৩৩) সেহেতু স্বপ্নে
আদম সেজদাকারীর চেহারায় ইবলিশ আসে না। তখন কিন্তু রসূল সুরতে স্বপ্নে,
রসূলও আসে নাই ইবলিশও আসে নাই। রসূল সুরতে স্বপ্নে স্বয়ং আল্লাহই আসে।
তখন কিন্তু রসূলরূপে আর রসূল আসে নাই স্বয়ং আল্লাহই আসে। এ মর্মে লালন
সাইজি তাঁর গানের ভাষায় বলেছে-যিনি মুর্শিদ/গুরু তিনি রসুল, ইহাতে নাই
কোনো ভুল। খোদাও সে হয়, এ কথা বলে না লালন কোরানে কয়। এবার এই মর্মে
আল্লাহ বলেন তোমরা যখন রসূলের কাছে যাবে তখন তোমাদের দৃষ্টিভঙ্গি এমনটি
থাকবে যে আমরা তো আল্লাহর কাছেই গেলাম। যখন তোমরা রসূলের কাছে বায়াত গ্রহণ
করবে তখন তো আল্লাহর কাছেই বায়াত গ্রহণ করলে। (সূরা ফাতহ : ১০) কারণ
তাদের হাতের উপরই আল্লাহর হাত। (সূরা ফাতহ : ১০) আর এই মর্মে আল্লাহ বলেন,
তোমরা যেখানেই থাক না কেন আমি তোমাদের সাথে আছি। (সূরা হাদিদ : ৪)। আল্লাহ
তো রসূলের ভেতরই সক্রিয় আছেন। (সূরা আনফাল : ১৭) আল্লাহ মানুষের গর্দানের
শাহ রগ অপেক্ষাও নিকটে। (সূরা কাফ : ১৬) (বি. দ্র. একত্ববাদের দ্বীন
অধ্যায় ও আল্লাহর অবস্থান সর্বত্রই অধ্যায় বিস্তারিত দেখুন) আল্লাহ
মানুষের অতি নিকটে (সুরা বাকারা-১৮৫) যিনি মুর্শিদ/গুরু তিনি রসুল।
(বি.দ্র.এই মর্মে সম্যকগুরুই রসুল অধ্যায় বিস্তারিত দেখুন।) অতএব রসূল
থেকে আল্লাহকে ফারাক না করে রসূল সুরতে আল্লাহ বিশ্বাস করাই একত্মবাদে
দ্বীন। এখানে উল্লেখ্য যে, ফারাক শব্দ অর্থ পৃথক করা। (আরবী অভিধান পৃ. নং
১৮৭৯) আর পৃথক শব্দের ইংরেজি হচ্ছে ঝবঢ়ধৎধঃব। (ইংরেজি অভিধান পৃ. নং ৭০৩)
যেটার অর্থ উরংঃধহপব বা দূরত্ব করা বুঝায়। অর্থাৎ সূরা নেসার ১৫০ নং
আয়াতের ভাবার্থ হচ্ছে রসূল থেকে আল্লাহ ঝবঢ়ধৎধঃব বা উরংঃধহপব না করে
বিশ্বাস করা। বরং রসূলের হাত আল্লাহর হাত বিশ্বাস করে রসূলের মধ্যে ব্যক্তি
রসূলকে বিলীন করে সেই সুরতে আল্লাহ বিশ্বাস করে সেখানে আল্লাহকে বর্তমান
জেনে সেজদা করা হয়। এটাই হচ্ছে রসূলের মাধ্যমে ঈমান পরীক্ষা করা। (সূরা
ফুরকান : ২০) উপরোক্ত আলোচনায় দেখা গেলো যারা রসুল থেকে আল্লাহকে ফারাক
করে বা ঝবঢ়ধৎধঃব (পৃথক) করে উহারা সুরা নেসার ১৫০নং আয়াত অনুসারে আল্লাহ ও
রসুলকে অস্বীকারকারী বলে গণ্য। তাই উহারা যখনই রসুল থেকে আল্লাহকে
ঝবঢ়ধৎধঃব বা পৃথক করে তখনই উহারা আল্লাহর সাথে রসুলের নাম জপনা করে। ফলে
উহারা সুরা জিনের ১৮নং আয়াত অমান্যকারী বলে গণ্য হয়। (কারণ এই আয়াতে বলা
হয়েছে তোমরা আল্লাহর সাথে কাউকে ডেকো না।)
বিধায় এরাও ইবলিসের অনুসারী তাই এরা 'জয়গুরু' বলে না। (বি: দ্র: এই পুস্তকে রসূলের কোন বিকল্প নেই অধ্যায় বিস্তারিত দেখুন)।
এখন আমরা বুঝলাম, গুরু নাম একত্ববাদের নাম, গুরু নাম আল্লাহর উত্তম
গুণবাচক নাম, গুরুনামে যারা আল্লাহ পাকের জয় কামনা করেনা, তারা দ্বীনের
ব্যাপারে কেউ দ্বি-পন্থী, বা কেউ তিনপন্থী শেরেকবাদী এটা বুঝলাম, কিন্তু আর
একটা প্রশ্ন থাকে যে, 'জয়' কথাটা সাধারণতঃ যুদ্ধক্ষেত্রে বা পক্ষে
বিপক্ষে প্রতিযোগীতার ক্ষেত্রে ব্যবহার হয়। কিন্ত দৈনন্দিন জীবনে তো যুদ্ধ
নেই, তাহলে কেন জয় কথাটা ব্যবহার করা হবে? আবার আল্লাহ পাকের জয় কামনা
করার ক্ষেত্রে আল্লাহর জয় কামনা আমরা কেন করব, কারণ আল্লাহতো সর্বশক্তিমান
ও সর্বশ্রেষ্ঠ, তাঁর সমকক্ষ কেউ নেই। তিনিতো সর্ব বিষয়ে সার্বক্ষণিক
জয়ী, আবার জয়গুরু দিয়ে আল্লাহর জয় কামনা করার দরকার কী? এই বিষয়ে আমরা
বিস্তারিত আলোচনা করি। আল্লাহর সমকক্ষ কেউ নেই, কিন্তু আল্লাহর প্রতিপক্ষ
আছে, আল্লাহর সেই প্রতিপক্ষ হচ্ছে ইবলিস। ইবলিস মানুষকে কুমন্ত্রণা দিয়ে
পথভ্রষ্ট করার লক্ষ্যে আল্লাহর কাছ থেকে ক্ষমতাপ্রাপ্ত ও অবকাশ প্রাপ্ত।
আল্লাহ বললেন, 'কিয়ামত দিবস পর্যন্ত এই কর্মের জন্য তোমাকে অবকাশ দেয়া
গেল। (হিযর, ৩৬ আয়াত)। কিন্তু সাথে সাথে এটাও জানিয়ে দিল যে, তাগুত
ইবলিসকে বর্জন করে মানুষ আল্লাহর এবাদত করবে এই উদ্দেশ্যে আমি রসূল
পাঠালাম। (নাহল, ৩৬ আয়াত)। সেই থেকে রসূল আল্লাহর পক্ষে ইবলিসের বিপক্ষে
যুদ্ধে লিপ্ত আছে। এই যুদ্ধ হচ্ছে নিজের নফসের সাথে যুদ্ধ। ইবলিস মানুষের
কাছে পাপ কর্মকে শোভন করে ধরে। (হিযর, ৩৯ আয়াত) এবং মানুষের অন্তরে
কুমন্ত্রণা দেয়। (ক্বাফ, ১৬ আয়াত)। ইবলিসের কুমন্ত্রণার সাথে যুদ্ধ করে
জয় লাভ করলেই প্রভুর নৈকট্য হাসিল হবে। এই মর্মে আল্লাহ বলেন, "হে মমিনগণ,
তোমরা যুদ্ধ করে জয়ী হলে অবশ্যই প্রভুর নৈকট্য লাভ করবে।" (মায়েদা, ৩৫
আয়াত)। সেই থেকে মমিনগণ ইবলিসের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত আছে, কেউ কেউ এই নফসানী
যুদ্ধে জয়লাভ করে ইবলিসের প্রতিপক্ষ রসূলের সঙ্গ ধারণ করে প্রভুর পক্ষে
জয়ের পথকে ত্বরান্বিত করেছেন। এই ভাবে প্রত্যেক মানুষই আমরা প্রতিনিয়ত
ইবলিসের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত আছি। এই যুদ্ধে জয়লাভের মাধ্যমেই জাহান্নামের
শাস্তি থেকে মুক্তির একমাত্র উপায়। দ্বীনের ক্ষেত্রে ইবলিসের সাথে যুদ্ধ
করাই একটা উত্তম বাণিজ্য। এই মর্মে আল্লাহ বলেন, এই যেহাদই হচ্ছে তোমাদের
জন্য উত্তম বাণিজ্য, যা তোমাদেরকে জাহান্নামের শাস্তি থেকে রেহাই দিবে।
(নং-৬১ আয়াত ১১)। যারা আল্লাহর উদ্দেশ্যে সংগ্রাম করে তাদেরকে আল্লাহ তার
পথেই পরিচালিত করেন। (সূরা-আনকাবুত, আয়াত-৬৯)। এইজন্য আমাদের দৈনন্দিন
কর্মকান্ডের সাথে জয়-পরাজয় কথাটা জড়িয়ে আছে, তাই সেই লক্ষ্যেই আমরা
ইবলিসের পরাজয় এবং প্রভুর জয় কামনা করি। এই মর্মে আল্লাহর দলের জয়
কামনাই পবিত্র কোরআনের ভিতরে নিম্নলিখিত আয়াতগুলির সন্ধান পাওয়া যায়।
আল্লাহ বলেন, সকল দ্বীনের উপরে এই একত্ববাদের দ্বীন তথা রসূল তত্বের এই
দ্বীনের জয় হউক, (নং-৬১ আয়াত ৯)। যারা জয় গুরু বলে, এরাই হচ্ছে আল্লাহর
মনোনীত একত্ববাদ দ্বীনের দল। অর্থাৎ আল্লাহর দল। এদের উদ্দেশ্যে আল্লাহ
বলেন, তোমরা নিশ্চিত থাক যে, আল্লাহর দলের জয় হবেই। (মায়েদা, ৫৬ আয়াত)।
জয়গুরু বলা যদিও একত্ববাদের দ্বীন, তথাপিও মুশরেকরা এটাকে অপ্রীতিকর মনে
করে। তারপরও আল্লাহ বলেন, সমস্ত দ্বীনের উপর এই একত্ববাদের দ্বীনের জয়
হবেই। (তওবা, ৩৩ আয়াত)। এজন্য পথ নির্দেশ ও সত্য দ্বীনসহ আল্লাহ রসূলকে
পাঠিয়েছেন। (তওবা, ৩৩ আয়াত)। এই একত্ববাদের দ্বীনকে যারা প্রত্যাখ্যান
করছে, তাদের বিরুদ্ধে জয় কামনা করা। সকল ধর্মের উপর এই একত্ববাদের দ্বীনকে
জয়যুক্ত করার জন্য রসূলগণ এসেছেন। (ফাতহ, ২৮ আয়াত)। যারা এই সত্য
দ্বীনকে বিরোধিতা করে তারা কাফের। কাফেরের বিরুদ্ধে সাহায্য কামনা করা।
(বাকরা, ২৮৬ আয়াত)। এইজন্য কাফেরদের বিরুদ্ধে তোমাকে স্পষ্ট বিজয় দান করা
হয়েছে। (ফাতহ, ১আয়াত)। সকল বিজয় আল্লাহর হাতে, তোমরা আল্লাহর উপর
নির্ভরশীল হও, এবং এই একত্ববাদের দ্বীনে প্রবেশ কর, অবশ্যই জয়লাভ করবে
(মায়েদা, ২৩ আয়াত)। আর আল্লাহ যদি সাহায্য করে তোমাদের উপর জয়ী হবার কেউ
থাকিবে না (ইমরান, ১৬০আয়াত)। মমিনদের জয় হলে মুনাফিকরা বলে, আমরাওত
তোমাদের সাথেই ছিলাম, (নিসা, ৪১আয়াত)। যার যার দ্বীনের সেই সেই জয় কামনা
কর। (ইব্রাহীম, ১৫আয়াত)। আল্লাহর সিদ্ধান্ত যে, আল্লাহর দল অবশ্যই বিজয়ী
হবে। (মুজাদালা, ২১ আয়াত)। তোমরা আশাবাদী হও, হয়ত আল্লাহ অবশ্যই জয়
দিবেন। (মায়েদা, ৫২আয়াত)। প্রত্যেকেই তাদের কর্মক্ষেত্রে জয় কামনা করে,
যেমন যাদুকরগণ মুছার বিরুদ্ধে জয় কামনা করল। (শুআরা, ৪৪ আয়াত)। আল্লাহ
বলেন, যারা আমার বাহিনী হবে, তারা অবশ্যই জয়লাভ করবে। (নং-৩৭, আয়াত ১৭৩)।
উপরিউক্ত আয়াতগুলোতে জয় কামনা করে আল্লাহ ঘোষণা করেছে বিধায়
'জয়গুরু' দিয়ে আল্লাহ পাকের জয় কামনা করলেই আমরা বিধর্মী হবো, এমন
চিন্তা অজ্ঞতার সামিল। তার পরেও পরস্পর দেখা হলে আমরা 'জয়গুরু' কেন বলি?
একজন মানুষকে দেখে 'জগগুরু' বলার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে প্রত্যেক মানুষ তার
কৃতকর্মের কারণে ইবলিস স্বভাব দ্বারা শৃংখলিত আছে, পরবর্তী পুনর্জীবিত করার
দিবস পর্যন্ত। (নং-২৩, আয়াত-১০০)। এখানে পুর্নজীবিত দিবস বলতে মৃত্যুর
পরে পুর্নজীবিত করে যখন তার প্রভুর কাছে নিয়ে যাওয়া হবে (নং- ৬,
আয়াত-৬২) এবং (নং- ৩২, আয়াত-১১)। সেই দিবস আসার পূর্বেই যেন মানুষ তার
মধ্যে ইবলিস স্বত্তাকে পরাজিত করে প্রভু সত্তার জাগরণ ঘটিয়ে প্রভুর
আহ্বানে সাড়া দিতে পারে। (নং-৪২ আয়াত- ৪৭)। সেই লক্ষ্যে প্রত্যেক
ব্যক্তির সাথে সাক্ষাতেই তার মধ্যে প্রভু স্বত্তার জয় কামনা করা হয়
বিধায় জয়গুরু বলা হয়। এই ব্যাপারে যারা নিজের ভিতরে ইবলিস স্বত্তাকে
পরাজিত করে প্রভুর আহ্বানে সাড়া দিয়েছে তাদের উদ্দেশ্যে আল্লাহ বলেন,
তোমরা তোমার প্রভুর উত্তম প্রশংসা কর। (নং- ৮৭, আয়াত-১৫)। কারণ প্রভুতো
তোমাকে বিজয় দান করেছে। (নং-৪৮, আয়াত-১)। অতঃপর তুমি তোমার প্রভুর উত্তম
প্রশংসা কর। (সূরা-কাউসার, আয়াত-২)। এই সকল আয়াতে উসাল্লি শব্দ এসেছে,
উসাল্লি শব্দের অর্থ উত্তম প্রশংসা করা। আরবি অভিধান পৃ. ১৬০৭)। এখানে
উল্লেখ্য যে, প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য ঘটনাকে জয় বলে। তাই প্রভুর প্রতি
উত্তম প্রশংসা বলতে 'জয়গুরু' শব্দকে ব্যবহার করা হয়েছে। কারণ জয় হচ্ছে
প্রশংসা আর গুরু হচ্ছে আল্লাহর উত্তম নাম। তাই 'জয়গুরু' দিয়ে প্রভুর
উত্তম প্রশংসা ব্যক্ত করা হয়েছে। কারণ 'জয়গুরু'টা হচ্ছে প্রশংসামূলক শব্দ
এবং উসাল্লি শব্দটাও প্রশংসামূলক শব্দ। উসাল্লি প্রশংসামূলক শব্দ এই জন্য
যে, আল্লাহ তার বান্দার প্রতি উসাল্লি আদায় করে। (আহযাব, আয়াত-৪৩)।
যেহেতু আল্লাহ তার বান্দার প্রতি উসাল্লি আদায় করে সেহেতু উসাল্লি শব্দ
কখনো উপাসনামূলক হতে পারে না বরং এটা প্রশংসামূলক। তাই যে সকল আয়াতে
প্রভুর প্রতি উসাল্লি আদায় করতে বলা হয়েছে সেসকল আয়াতগুলির ভাবার্থই
প্রভুর জয় কামনা করার নির্দেশ প্রতিফলিত হয়েছে। তাই সেসকল আয়াত অনুসারে
প্রভুর উত্তম প্রশংসা করার নির্দেশ এসেছে, তাই প্রভুর উত্তম প্রশংসা করার
লক্ষ্যে গুরুনামে প্রভুর জয় কামনা করা। তাই মমিনগণ 'জয়গুরু' বলে থাকেন।
এখানে আর একটি প্রশ্ন থাকে যে, যেহেতু উসাল্লি প্রশংসামূলক শব্দ আর এই
উসাল্লি আয়াতগুলো দিয়ে প্রভুর প্রতি উত্তম প্রশংসা করার নির্দেশ আস